ডেস্ক রিপোর্টঃ
০৬/০৫/২০২৫।
বাংলাদেশে উদীয়মান শিল্পের মধ্যে ঔষধ শিল্প অন্যতম এবং যে শিল্প একদিন গার্মেন্টস’র মতো বিশ্বে নেতৃত্বে থাকবে । ১৫০টি দেশে কমবেশি এদেশের ঔষধ রপ্তানি হয়। সেলস মার্কেটিং এ তিন লক্ষাধিক উচ্চ শিক্ষিত যুবক রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফিল্ডে কাজ করে এবং ডাক্তারদের ঔষধ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সরাসরি প্রদান করে আসছে এবং তথ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরও তাদের দিতে হয়। এক্ষেত্রে ডাক্তারদের প্রোডাক্টটির স্যাম্পল সৌজন্য হিসেবে দেয়া হয় রোগীর উপর প্রয়োগ করে কার্যকারিতা পরোখ করে নেয়ার জন্য। কিন্তু কতোজন ডাক্তার তা করে আমাদের জানা নেই। লাগামহীন ঔষধ কোম্পানিগুলো বিক্রি বৃদ্ধির জন্য এইসব প্রতিনিধিদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করায় যা ঔষধ মার্কেটিং এর ইথিকসে পরে না তারপরও তাদের করতে হয়। এরমধ্যে প্রেসক্রিপশন সার্ভের নামে টানাটানি, আউট ডোর, ইনডোর, চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে জটলা পাকানো , ডাক্তারদের উপহার প্রদান, মোটর সাইকেলে লিফট দেয়া, শুক্র-শনিবার ডাক্তারকে দূরবর্তী চেম্বারে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের শেষ ইচ্ছে তাদের একটি ঔষধ কোম্পানি দিতে হবে যাতে দ্রুত টাকার পাহাড় বানানো যায় । দেখা গেছে শত্তুর -আশির দশকের টিনের চালার কোম্পানি এখন ৫০-৬০টি কোম্পানির মালিক কিন্তু এখানে মাঠে ঘাটে কাজ করে যারা বিক্রি বৃদ্ধি করে এ পর্যায়ে নিয়ে আসলো তাদের ১০-১২ বছর পরে বিভিন্ন অজুহাতে বিদায় করে দেয়া হয়। এর অন্যতম কারণ বেতন বেড়ে যাওয়া ও বয়স বৃদ্ধি। গুটিকয়েক ভাগ্যবান ব্যক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে যাদের মধ্যে বিশেষ গুণ বিদ্যমান। এইসব গুণান্বিত ব্যক্তিবর্গ মালিক পক্ষকে বিক্রি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সু-বুদ্ধি, পলিসি প্রদান করে যা ইমপ্লিমেন্ট করতে গিয়ে বলির পাঠা হয় মেডিকেল প্রতিনিধি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় তাদেরকে এ্যারেস্ট পর্যন্ত করেছে যা তাদের নিজেদের অপরাধের জন্য নয়। প্রেসক্রিপশন সার্ভের মতো অনৈতিক কাজ তাদের করতে হয় শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের চাপের কারণে। অনেক কোম্পানি তাদেরকে সরকারি ছুটি ভোগ করতে দেয় না, অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম দেয় না, অতিরিক্ত সেলস এবং প্রেসক্রিপশন টার্গেট দিয়ে মানসিক টর্চার করে। এসব সহ্য করে এই চাকরিটা উচ্চশিক্ষিত যুবকদের করতে হয় কেননা সরকারি চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ নাই।
সরাসরি ভিজিটের ব্যবস্থা না থাকলে এইসব তরুণ বেকার হয়ে যাবে এবং ফার্মা শিল্প তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। দেশে ইথিক্যাল প্রতিযোগীতা না থাকলে শিল্প এগুবে না এবং রপ্তানিও ব্যাহত হবে।
“তাই দেশ, ঔষধ শিল্প, রোগী ও ডাক্তারদের সঠিক তথ্যের স্বার্থে মেডিকেল প্রতিনিধিদের সরাসরি ভিজিটের আপাতত কোনো বিকল্প নেই”।
সরকার যখন এইসব উচ্চশিক্ষিত তরুণের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এদেশে সৃষ্টি করতে পারবে তখন তারা স্ব-ইচ্ছায় এই সেক্টর ত্যাগ করবে কেননা এখানে তাদের রাস্তা ঘাটে দাড়িয়ে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে অফিস করতে হয় যা অনভিপ্রেত।
বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সংস্কার কমিশনগুলো ভেবেচিন্তে সংস্কার প্রস্তাব দিবেন বলে জনগণ প্রত্যাশা করে।
লেখকঃ লায়ন সোবহান হাওলাদার
সম্পাদক ও প্রকাশক