লায়ন সোবহান হাওলাদার
বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার কোন কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের দ্বারা মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত তা স্পষ্ট নয়। সংস্কার সব দল চায় আবার দ্রুত নির্বাচন চায় কিন্তু সংস্কারে ন্যুনতম সময় দিতে চায় না। যারা নির্বাচন চায় তাদের মনোনিত ব্যক্তিরা কী উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নয়? তাহলে কীভাবে তৈরি হলো এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ? বর্তমানে আমরা দুইজন ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতি দেখছি বাকী উপদেষ্টারা কোন দলের শুপারিশে মনোনীত হলো ? শুধু ছাত্র প্রতিনিধিরা পদত্যাগ করলেই কী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? বিভিন্ন টকশোতে প্রায় শোনা যাচ্ছে বড় দলগুলোর মনোনীত উপদেষ্টা সরকারে রয়েছে কিন্তু দলগুলো স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করে না। যদি তা না হয় তাহলে সরকারের উপদেষ্টা কীভাবে নির্বাচিত হলো জনগণের তা জানার অধিকার আছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধান উপদেষ্টা বা সেনাপ্রধানের ইচ্ছাতেই কী সব হয়েছে? রাজনৈতিক দলের কী কোনো ভূমিকা ছিল না? এছাড়া বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে বিশাল পরিবর্তন সরকার ও রাজনৈতিক দলের কারো না কারো সুপরিশে হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকসহ স্থানীয় সরকারে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এসব জায়গায় কোন দলের লোকজন বসেছে? রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলীতে আসে নাই সত্যি তাই বলে উপদেষ্টারা নিজেরা গিয়ে উপদেষ্টা হয়নি। জনগণের ধারণা প্রধান উপদেষ্টা ও তার দ্বারা মনোনীত দুই /তিনজন এবং ছাত্র উপদেষ্টা ব্যতিরিকে বাকীরা সব বড় বড় দলের শুপারিশে মনোনীত । এসব উপদেষ্টারা বাহ্যিকভাবে দলের কেউ নন কিন্তু সমর্থক।
জনগণ সবকিছুই বুঝে তাই জনগণকে বোকা ভাবা ঠিক নয়। আপনাদের দলীয় সাপোর্টারস যেহেতু সরকারে আছে তাই তাদের বুদ্ধি পরামর্শ দিন, যাতে দেশে আইন শৃঙ্খলা ঠিক থাকে যাতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না হয় । নির্বাচন দিলেই এ দেশ ভালো হয়ে যাবে তা জনগণ বিশ্বাস করে না। এ পর্যন্ত বহু নির্বাচন জনগণ দেখেছে। যতো নির্বাচন, নির্বাচন করবেন ততোই অজনপ্রিয় হবেন। পরোক্ষভাবে বড় রাজনৈতিক দলগুলোই তো দেশ চালাচ্ছে। অন্তর্বতীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে এর দায় কী তারা এড়াতে পারবেন?
নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী মূখ্য ভূমিকা পালন করে তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাদেরকে সংস্কার করে শক্তিশালী করতে হবে অন্যথায় ইলেকশনের জায়গায় পেশিশক্তি দিয়ে সিলেকশন হয়ে যাবে যা পুনরায় দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
আপনারা না চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা বেশি সময় ক্ষেপণ না করে নির্বাচন দিয়ে প্রস্থান করবেন একথা আপামর জনগণ বিশ্বাস করে কিন্তু তার আগে দরকার ন্যুনতম সংস্কার যাতে পরবর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করতে বাধ্য হয়। আবার “যেই লাউ সেই কদু” না হয় তাহলে জুলাই বিপ্লবের কী প্রয়োজন ছিল?
প্রধান উপদেষ্টার বয়স ৮৪। বিশ্বের ২/৪টি দেশ ছাড়া সারাবিশ্বে তিনি সমাদৃত। তার এই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে দেশ সঠিক ট্র্যাকে উঠুক এটাই জনগণের প্রত্যাশা। তিনি ইচ্ছে করলেও বয়সের কারণে বেশিদিন নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। আপনাদের যদি প্রয়োজন হয় আরো উপদেষ্টা বানিয়ে নিন তবুও নোবেল বিজয়ীকে বিতর্কিত কিংবা দেশ গঠনে তাহার কাজে ব্যাঘাত ঘটাবেন না। জনগণ ইতিমধ্যেই তাহার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে বক্তব্য দিচ্ছে। যে রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার ভালো কাজে বিঘ্ন ঘটাবেন নিঃসন্দেহে সে দলই অজনপ্রিয় হবে। ১৫ বছর অপেক্ষা করেছেন আর ৫/৬ মাস দেরি হলে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
মনে রাখবেন ধৈর্য্যের ফল ভালো হয় যার প্রমাণ বছরের পর বছর আপনারা দিয়েছেন।