
মোঃ রেজাউল ইসলাম লাকী
রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারের আশেপাশে প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, পুরানা পল্টন মোড় থেকে নাইটেঙ্গেল মোড়, গুলিস্তান, রাজউকের সামনে রোডে, ঢাকা ইউনিভার্সিটি, শাহবাগ মোড়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ফার্মগেট, মিরপুর মাজার সহ আশেপাশের এলাকায়, গুলিস্তান, গোলাপসা মাজার, মৌচাক মার্কেট, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন রেলগেট, সদরঘাট, সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড, মহাখালী বাস স্ট্যান্ড, হাতিরঝিল, গুলশান বনানী ধানমন্ডির কিছু এলাকা, গাবতলী বাস স্ট্যান্ড সহ সারা ঢাকা শহরের কিছু কিছু জায়গাতে পথশিশু নামক একদল মাদকাসক্ত মানুষকে দেখা যায়। তারা ড্যান্ডি নামক একটি নেশা খায় যেটি আসলে চামড়ার জুতা বানানোর একটি সলিউশন আঠা, এটি তারা পলিথিনের ভিতর নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আসক্ত হতে থাকে এবং আসক্ত হওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পর্যন্ত তারা অচেতন হয়ে পড়ে থাকে। দুঃখের বিষয় হলো এখানে শুধু পথশিশু বলাটা ঠিক হবে না কারণ, এই গ্রুপের ভিতরে শুধু যে শিশুর রয়েছে তা নয় এখানে শিশু বালক যুবক বৃদ্ধ এমনকি শিশু, যুবতী ও মধ্যবয়স্ক নারীরা রয়েছেন এরা দিনের বেলা একত্রিত হয়ে একটি জায়গাতে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বসে ও শুয়ে থাকেন। রাত বারোটার পরেই দেখা যায় ঢাকা শহরের এই ব্যস্ততম রোডের মাঝখানের যে ডিভাইডার রয়েছে সেখানে এস এস এর রেলিং এর উপর অথবা ফ্লাইওভারের নিচে পলিথিন ও বিভিন্ন রকমের কাপড় চোপড় দিয়ে রাত্রি যাপন করার জন্য ছোট ছোট তাবু তৈরি করে ফেলেন। সেখানে তারা রাত্রি যাপন করেন। তারা যে শুধু ড্যান্ডি খায় তা নয়, এখানে দেখা যায় দিনের বেলা ওপেনে গাঁজা তৈরি করা হচ্ছে এবং হয়তো আরো অনেক ধরনের নেশা তারা গ্রহণ করে থাকেন,কথা হল তারা তো পথে থাকে তারা এই ড্যান্ডি সহ অন্য নেশা ক্রয়ের অর্থ কোথা থেকে পায়। তাহলে বলাই যায় ছিনতাই সহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে তারা জড়িত। আরেকটি ভয়ংকর ব্যাপার হলো যেমন পল্টন মোড়ের গ্রুপ অন্য মোরে অন্য গ্রুপের জায়গায় যেতে পারবে না, যার যার গলি বা জায়গাতে তাদেরকে থাকতে হবে একজন আরেকজনের জায়গাতে গেলেই তাদের ভিতরে গ্যাঞ্জাম লেগে যায়। ইদানিং কালে অনেক মিডিয়া ও পেপার পত্রিকায় এসেছে যাত্রাবাড়ীতে সহ অন্যান্য ব্যস্ততম সড়কে গাড়ি থেকে থাবা দিয়ে হাতের মোবাইল নিয়ে চলে যায়, তারা ঘোরাঘুরি করতে থাকে সুযোগ বুঝেই মোবাইল ছিনতায়ের এই কাজটি করে। দুঃখের বিষয় হলো সংশ্লিষ্টরা এটিকে দেখতে দেখতে যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে । আমার প্রশ্ন হল কার দায়িত্ব এদেরকে সংস্কার করা। এরা যেভাবে রাস্তায় ব্যস্ততম সড়ক গুলিতে বিশৃঙ্খল ভাবে বিচরণ করছে তাতে সাধারণ মানুষের পথচলা প্রায় অনেক সময় বিঘ্ন ঘটে। আরেকটি দুঃখের বিষয় হলো ব্যাংক পাড়া প্রেসক্লাব এবং বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে থ্রি স্টার ফোর স্টার হোটেল গুলির সামনে এদেরকে দেখা যায়, সেখানে যখন বিদেশী বা বিভিন্ন ধরনের ডেলিগেটরা আসা-যাওয়া করেন তাদের চোখে এটি পড়ে, কিন্তু সংশ্লিষ্টদের চোখে কেন পড়ছে না। তাদেরকে দেখা যায় বিভিন্ন লোকের কাছে খাবারও টাকা পয়সা চাইছে সেখানে তাদেরকে না দেওয়া হলে তারা তাদের সাথে উদ্ভট আচরণ করেন। মজার ব্যাপার হল আমি ব্যক্তিগতভাবে এই পথশিশু নামক লোক গুলির সাথে কথা বলেছি তাদের ইতিহাস শুনলে গা শিউরে উঠবে। তাদের কারো মা নেই বাবা ও নেই আবার কারো মা আছে অথবা বাবা আছে অথবা মা-বাবা দুজনই আছে বাবা হয়তো দুটি একটি বিয়ে করেছে মা ও দুই একটি বিয়ে করেছে, আবার অনেকের মা-বাবাকে কোথায় আছে তা তারা জানে না তারা কিভাবে এখানে এসেছে তাও তারা জানে না। এবং তাদের মুখের ভাষ্য তাদের মধ্য দিয়েই পথ শিশু তৈরি হচ্ছে।আবার অনেকে বিভিন্ন মহল্লাতে ছিনতাই চুরি সহ বিভিন্ন অপকর্মের কাজের সংশ্লিষ্ট হওয়ায় মহল্লাবাসীর চোখের আড়াল হয়ে এই গ্রুপের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে থাকছেন। দেখলে এমনটি মনে হয় যেন তাদেরকে যদি সংস্কার করা হয় তাহলে কেউ বাধা দিবে অথবা তাদের সংস্কার করে কি হবে এটি ভেবেও সংশ্লিষ্টরা চোখ এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে নিয়ে অবশ্যই সরকারের পরিকল্পনা করা উচিত কিভাবে এটিকে নিরসন করা যায়। তারা হয়তো এভাবে একদিন চলতে চলতে বড় ধরনের একটি গ্রুপে তৈরি হবে তখন তাদেরকে এখান থেকে সরানোটা মুশকিল হতে পারে। তাদেরকে বোঝা মনে করলে হবে না কারণ তারা আল্লাহর তৈরি মানুষ তাদের পিছনে প্রত্যেকের একটি করে ইতিহাস আছে। তাদের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে আনুমানিক হিসাব করে দেখা গেছে প্রায় দশ হাজারের উপরেও তাদের সংখ্যা তারা যে পায়খানা প্রস্রাব সহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা ফেলে আমাদের প্রাণকেন্দ্র রাজধানীর এই ব্যস্ততম জায়গাগুলোকে নোংরা করে রেখেছে, তাদের এই বিচরণের জায়গায় বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ময়লা সামগ্রী দেখা যায়। একটি দেশের রাজধানীতে ব্যস্ততম সড়ক গুলিতে এরকমের নেশাগ্রস্ত মানুষ বিচরণ করাটা খুবই দুঃখের বিষয়। আসুন আমরা সবাই মিলে এ ব্যাপারে সচেতন হই।কিছুদিন আগে বিশ্ব ধূমপানমুক্ত পরিষদ নামক একটি সংগঠন তাদেরকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছে এবং এই সংগঠনটি, নেশাগ্রস্থ হওয়ার প্রথম ধাপ বা চাবি ধূমপানের বিরুদ্ধে, ধূমপায়ী ব্যক্তিদের কে সচেতন করার লক্ষ্যে ও ঢাকা শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের এই রাজধানী ঢাকাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ব্যাপারটি নজরে আনার জন্য এবং অতি দ্রুত সুন্দর একটি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।