সংগঠন একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে।
সাধারণত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিশেষায়িত উপাদানসমূহের সুষম সমন্বয় সাধনকে সংগঠন বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, কতিপয় ব্যক্তি বা দল পারস্পরিক স্বার্থে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে একটি সামাজিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ভিতর অন্তর্ভুক্ত হওয়া।

সহজ কথায়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বা ততোধিক ব্যক্তি পূর্ব নির্ধারিত পদ্ধতিতে একত্রিত হয়ে কাজ করলে তাহাই সংগঠন।

নেতৃত্ব হল এমন এক “সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনও একটি সার্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে। নেতৃত্ব হল মানুষের জন্য একটি পথ খুলে দেওয়া যাতে তারা কোনও অসাধারণ ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে পারে। কার্যকর নেতা বলতে তাকেই বুঝায় যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়ার ক্ষমতা রাখেন এবং কোনও সংস্থা বা সমাজের প্রত্যাশা পূরণকারী হিসেবে স্বীকৃতি পান।

“নেতৃত্ব আসলে ক্ষমতাঃ
নেতাদের শোনার ও পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা, সব স্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করায় উৎসাহদানের জন্য নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা, জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ ও দূরদর্শিতাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা।

সংগঠনের নেতৃত্বের মধ্যে সততা, পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, ছাড় দেয়ার মানসিকতা, দোষারোপ পরিহার অত্যাবশকীয় । শীর্ষ নেতৃত্বের ক্ষমতার অপব্যবহারে অনেক সংগঠনে বহুধা বিভক্তি দেখা দেয় তাই বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, ধীর স্থির ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন শীর্ষ নেতৃত্বই সংগঠনকে সুসংগঠিত রাখতে সমর্থ হয়।

সংগঠন করতে হলে মানুষের গালি, কটু-কথা শুনতে হয়, সমালোচনা সহ্য করতে হয়। এর অধিকাংশই হয় নেতার অগোচরে।
মনে রাখতে হবে আজ তোমাকে যে হাত দিয়ে ফুলের মালা পরাবে, সেই হাত দিয়ে তোমাকে জুতার মালাও পরাতে দ্বিধা করবে না। যে মুখ দিয়ে তোমার প্রশংসা করবে, সে মুখ দিয়ে তোমাকে গালি দিবে। যে হাত দিয়ে মালা পড়িয়েছে সে হাত তোমার গায়ে উঠতে পারে। এসব সহ্য করেই সংগঠন করতে হয়।

শীর্ষ নেতারা তার পরবর্তী স্তরে সৎ, নির্লোভ, নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নেতা তৈরি করতে না পারলে কর্মীরা আস্তে আস্তে শীর্ষ নেতা থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়। অনেক ক্ষেত্রেই শীর্ষ নেতার অগোচরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতারা পকেট কমিটি তৈরি করে যা সংগঠন এবং শীর্ষ নেতার জন্য মঙ্গলজনক নয়। এক্ষেত্রে সৎ, নির্লোভ, জনদরদী শীর্ষ নেতার নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কোনো ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল না হয়ে ক্রস চেকের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব পরবর্তী নেতৃত্ব গঠন করলে সংগঠন শক্তিশালী ও গতিশীল হয়।

লেখকঃ লায়ন সোবহান হাওলাদার
গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী

__RECORD__