এদেশে বাৎসরিক প্রায় পাঁচ বিলিয়নের ফার্মা মাকের্ট। ৮০’র দশকে এরশাদ সরকারের ঔষধনীতি ফার্মা মার্কেট বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। অনেক কোম্পানিই তাদের কর্মচারী, কর্মকতা ও দেশবাসীকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিক্রির গল্প শুনায়, তাদের একটি থেকে ৫০ টি কোম্পানি হয়েছে। টিনের চালায় শুরু করে এখন শত শত বহুতল ভবন। কেউ সালসা, কেউ কোমল পানীয় , কেউ বিদেশি কোম্পানির এজেন্সি থেকে শুরু করে আজকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও ধনী। শিল্পপতিদের সফলতার এসব গল্প বলতে ও শুনতে বেশ ভালো লাগে কিন্তু গল্পের পিছনে আরও গল্প থাকে যা অনেকেই বলে না । দরবেশ হতে পারে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আসলে এদেশে ফার্মা মার্কেট বিকাশের মূল কারণ এরশাদের ঔষধনীতি, তরুণ ডাক্তারদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশীয় ঔষধ প্রেসক্রাইভের মাইনসেট ও লক্ষ লক্ষ তরুণ মেডিকেল প্রতিনিধিদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রমের ফসল।
মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররা ডাক্তারদের দেশীয় প্রোডাক্ট লিখতে উজ্জীবিত করে।
এসব তরুণের গুটিকয়েক মাঝ বয়সে সুবিধাভোগীর কাতারে আসতে পারলেও বাকিরা হয় শোষিত। এটাই অধিকাংশ কোম্পানির পলিসি। এই কাতারে আসতে হলে বিশেষ কিছু গুণ থাকা আবশ্যক।
কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক তরুণ উচ্চ শিক্ষিত ফিল্ড ফোর্সদের ( মেডিকেল প্রতিনিধি) সরকার কর্তৃক ঘোষিত ছুটি ভোগ করতে না দেয়া, অতিরিক্ত কাজের বেনিফিট থেকে বঞ্চিত করা, লভ্যাংশের সঠিক হিস্যা না দেয়া , প্রেসক্রিপশন সার্ভের নামে ছবি তুলতে বাধ্য করা, অতিরিক্ত বিক্রির লক্ষ্যে অগ্রহণযোগ্য টার্গেট এসিভ করতে চাপ প্রয়োগ সর্বোপরি প্রতিমুহূর্তে চাকরীর অনিশ্চয়তা। সেলস টার্গেট এসিভ করতে না পারলেই ম্যানেজমেন্টে থাকা সুবিধাভোগীরা খোঁজা শুরু করে প্রতিনিধির দোষত্রুটি পরিণত হয় একসময়ের হিরো ছেলেটি ভিলেনে। যৌবনের শ্রেষ্ট সময় দিয়ে হাজার কোটির মালিক বানানো শিল্পপতিরা এদের ছুড়ে ফেলতে এক মুহুর্তও সময় নেয় না। তখন তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়ে চরম দুর্ভোগে । হারিয়ে ফেলে স্বপ্ন, নতুন পথের সন্ধানে ছুটাছুটি করে দিকবিদিক। এদের এ ধরণের অমানবিক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে বাস্তবায়নযোগ্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা যা সরকার, মালিকপক্ষ ও কেন্দ্রীয় ফারিয়া মিলে নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করবে অন্যথায় একটি উদীয়মান শিল্পে ঘটতে পারে ছন্দপতন। ইতিমধ্যেই সংস্কার কমিশনের ডাক্তার ভিজিট নিয়ে একটি প্রস্তাব মেডিকেল প্রতিনিধিদের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে যা বর্তমান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে গ্রহনযোগ্য নয়। এই প্রস্তাব “কমিশন ও সরকার” পুনর্বিবেচনা করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখকঃ লায়ন সোবহান হাওলাদার, গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী।
সদস্য,স্থায়ী পরিষদ,কেন্দ্রীয় ফারিয়া